ডিজিটাল যুগে এসেও এন আই ডি সংশোধনে, চড়ম দূর্ভোগের শেষ নেই ।
গতকাল ইসির এনআইডি উইংয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার দফতরে সরেজমিন ঘুরে এমন ভোগান্তির তথ্য পাওয়া গেছে। ভোটারদের অভিযোগ, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা পেতে সীমাহীন বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। বিশেষ করে যাদের এসএসসি পাসের সনদ নেই তারা পড়ছেন চরম বিপাকে। সেই সঙ্গে কারিগরি বোর্ড, মাদ্রাসা বোর্ডের সার্টিফিকেটধারীদের সংশোধনীর জন্য ঘুরতে হয় দ্বারে দ্বারে। তবে ওপর মহলে যোগাযোগ ও আর্থিক লেনদেনে কেউ কেউ কাজ করে নিচ্ছেন। এই বাস্তবতা সামনে রেখে আজ সারা দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় ভোটার দিবস পালিত হচ্ছে। ‘ভোটার হয়ে ভোট দেব, দেশ গড়ায় অংশ নেব’ স্লোগান নিয়ে সকালে র্যালি ও বিকালে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ইসি। ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, নাগরিকরা যাতে ভোগান্তির শিকার না হয়, এ জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তিনি বলেন, আগে এনআইডির কাজ কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় ছিল। কিন্তু এখন নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা অফিস থেকে করা হচ্ছে। সেবাটা মানুষের দ্বারপ্রান্তে নেওয়ার চেষ্টা করছি। হারানো আইডি মানুষ অনেক দ্রুত সময়ে পাচ্ছেন। কিন্তু সংশোধনীর বিষয়টি অনেক সংবেদনশীল। তাই খুব নিখুঁতভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। এর আগে অনেকেই অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করেছে। তাই আমরা এই বিষয়ে অনেকটা সতর্ক থাকি। দেখা যায়, আইডি সংশোধনের মাধ্যমে একজনের জমি আর একজন দখল করে নেয়। অনেক ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে। আমরা যদি হয়রানির সুনির্দিষ্ট তথ্য পাই তবে অবশ্যই শাস্তির ব্যবস্থা নেব। গতকাল সকাল ৯টা। নির্বাচন কমিশনের সব কর্মকর্তা তখনো অফিসে আসেননি। কিন্তু ইসির নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) ভবনের নিচে অপেক্ষা করতে দেখা যায় বেশ কিছু মানুষকে। কেউ এসেছেন হারানো জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তুলতে। কেউ এসেছেন এনআইডির সংশোধনীর খবর নিতে। কেউ বা এসেছেন স্মার্ট কার্ডের খবর নিতে। সকাল সকাল কেন এসেছেন জানতে চাইলে রফিক নামের একজন জানান, ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হবে, হারানো কার্ড তোলার আবেদন জমা দিতে লাইনে দাঁড়াতে তাই সকালে এসেছি। এ সময় কথা হয় রবি নামের অপর এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, এনআইডি সংশোধনীর ভোগান্তির কথা। আবেদন জমা থেকে তদন্ত এবং কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার ভোগান্তির কথাও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ইএস (ছদ্মনাম) নামের একজনের এনআইডি সংশোধনীর খবর নিতে তিনি চার মাস ধরে ইসিতে আসছেন। ওই ব্যক্তি ঢাকার মতিঝিল এলাকার ভোটার। গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তিনি আবেদন জমা দিয়েছেন মতিঝিল অফিসে। ওই সময় কার্ড দেওয়ার সম্ভাব্য তারিখ দেওয়া হয় ২৬ সেপ্টেম্বর। কিন্তু এই সংশোধনীর তদন্ত করতে ইসির থানা অফিসারের কাছে অসংখ্য দিন যেতে হয়েছে তাকে। এরপরে ওই সংশোধনী আবেদন ইসির এনআইডি শাখায় আসতেও সময় লেগেছে দুই মাস। আবার এই আবেদনের ফাইল তিন দফা হারিয়ে গেছে। এরপরে সর্বশেষ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আবারও ফাইল নতুন করে উপস্থাপন করেন ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। আর এই ফাইল পুনরায় উপস্থাপনের জন্য তদবির করতে হয়েছে বড় বড় কর্মকর্তাদের দিয়ে। যদিও ইসির ভুলে আবেদনের ফাইল হারিয়েছে কিন্তু ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাকে। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার এনআইডির এক কর্মকর্তার দফতর থেকে প্রায় ১ হাজার ফাইলের স্তূপ খুঁজে আমার ফাইল উদ্ধার করেছি। এ সময় অনেককেই হারানো ফাইল খুঁজতেও দেখেছি। একজন ব্যক্তিকে কর্মকর্তার পা ধরতেও দেখেছি সংশোধনী আবেদনের জন্য। কথা বলতে গিয়ে তিনি নিজে আবেগাপ্লুত হন। বলেন, তদবির ছাড়া ইসিতে কিছুই হয় না। যাদের নিজেদের পরিচিত কেউ নেই, তাদের কাজ বছরের পর বছর পড়ে থাকে। আমার একজন নিকট আত্মীয় ছিল বলে আমার ফাইল খুঁজে পেয়েছি। সাদিয়া নামের এক ভোটার অভিযোগ করেন দীর্ঘদিনেও তিনি স্মার্ট কার্ড পাননি। তিনি বলেন, আমি বান্দরবানের ভোটার। কিন্তু আমার পরিবারের সবাই স্মার্ট কার্ড পেয়েছে। আমার কার্ডের কী অবস্থা তা জানাতে পারছে না ইসির কর্মকর্তারা। বলেন, ইসির সেই অফিসে অনেক বার খবর নিতে গিয়েছি। কিন্তু তারা বলেছেন, ঢাকা অফিসে খবর নিতে। আর ঢাকা অফিসের কেউ সহযোগিতাও করছে না। সকাল ১১টায় দেখা যায়, প্রায় শতাধিক মানুষ হারানো আইডি কার্ডের লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন আগারগাঁওয়ের ইটিআই ভবনের নিচে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হারানো কার্ড পেয়ে একটু ভোগান্তি কম। সকালে লাইনে দাঁড়িয়ে আবেদন জমা দিতে পারলে বিকালে পাওয়া যায়। তবে হঠাৎ হঠাৎ ইসির সার্ভার থাকে না বলে জানান এক ভুক্তভুগী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, আমি গত কয়েক দিন এসেছিলাম কাজে। এসে শুনি সার্ভার কাজ করছে না। এই ডিজিটাল যুগেও যদি সার্ভার সার্বক্ষণিক কাজ না করে তবে আর কী হলো বলেন?